শতবর্ষী শতাধিক বটগাছের ছায়ায় বসে যে মেলা

শতবর্ষী শতাধিক বটগাছের ছায়ায় বসে যে মেলা,নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা ইউনিয়নের সোনর গ্রামের একটি এলাকা দেবালের টেক। এখানে শত শতাংশ জমিতে শতবর্ষী শতাধিক বটগাছ দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি। বছরে একবার এখানে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পূজা দিতে আসেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় দিনে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে এক দিনের জন্য মেলা বসে। নির্ধারিত দিনে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দোকান পাতেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ মেলায় আসেন।

 

শতবর্ষী শতাধিক বটগাছের ছায়ায় বসে যে মেলা

 

শতবর্ষী শতাধিক বটগাছের ছায়ায় বসে যে মেলা

গতকাল বুধবার হয়ে গেল এই বছরের পূজা ও পূজা ঘিরে মেলা। স্থানীয় লোকজনের দাবি, মেলার বয়স শত বছর পেরিয়েছে অনেক আগেই। অন্তত ১০০ বছর আগে দেবালের টেক জায়গাটি ছিল হারান পাল নামের একজনের। তাঁর মৃত্যুর পর বংশানুক্রমে তাঁর উত্তরসূরিরা জায়গাটির ভোগদখল করছেন। এই পরিবারের বর্তমান সদস্যদের কাছে মেলাটি এখানে কত বছর ধরে বসে জানতে চাইলে সন-তারিখ তাঁরা জানাতে পারেননি। তাঁরা জেনেছেন, তাঁদের

দাদা হারান পাল ছোটবেলা থেকে এই মেলা দেখে এসেছেন। শুধু তা-ই নয়, হারান পালের দাদাও তাঁর ছোটবেলায় এই মেলা দেখেছেন।স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথায় ওঠে আসে, এখানকার বটগাছগুলো কয়েক শ বছরের পুরোনো। মূলত একটি বটগাছ থেকেই এখানে শতাধিক বটগাছের জন্ম হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক কারণে বটগাছের সংখ্যা কিছু কমে গেছে। মেলার কোনো আয়োজক নেই। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এখানে আসেন। সকাল ৬টা থেকে রাত

১০টা পর্যন্ত চলে এই মেলা। এই মেলা উপলক্ষে গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির মেয়েরা নাইয়র আসেন। বাড়িগুলোয় নানা পদের রান্নার আয়োজন হয়গতকাল মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বটগাছগুলোর সামনে ত্রিপল বা প্লাস্টিক পেতে নানা মুখরোচক খাবার ও বাহারি পণ্যের দোকান সাজিয়ে বসেছেন শতাধিক মৌসুমি ব্যবসায়ী। বিক্রি হচ্ছে জিলাপি, মিষ্টি, সন্দেশ, নানা রকমের মোয়া ও পিঠা। এ ছাড়া মিলছে শিশুদের খেলনা, কসমেটিকস, তৈজসপত্র, পোশাক

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

,

মাটি ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র। শিশু থেকে বৃদ্ধ—বিভিন্ন বয়সী লোকজন মেলা ঘুরে ঘুরে এসব কিনছেন।বিভিন্ন ছাঁচের মাধ্যমে হাতে মেহেদির ছাপ দিচ্ছিলেন মাহমুদা বেগম নামের এক মধ্যবয়সী নারী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩৫ বছর ধরে তিনি এই মেলায় দোকান দেন। মেলায় আসা কমবয়সী ছেলেমেয়েরা তাঁর ভোক্তা। পছন্দমতো নকশার ছাপ হাতে পড়লে তাদের হাসিমুখ দেখতে তাঁর ভালো লাগে।

জিলাপির দোকানদার তপন ঘোষ বলেন, ‘যেখানেই মেলার খবর পাই, সেখানেই যাই। তবে শত বছরের বেশি পুরোনো এই মেলায় সবাই নিজ থেকেই আসেন। মধ্যে করোনার সময় দুই বছর নামমাত্র মেলা হয়েছিল। তবে এবার লোকজন ভালোই আসছেন। বিক্রি-বাট্টাও খারাপ না।’মেলায় আসা সায়মা আক্তার নামের একজন বলেন, ‘এক শ বটগাছ দেখতে এখানে আগেও এসেছিলাম। এতগুলো বটগাছ একসঙ্গে দেখার একটা আনন্দ আছে। মেলা হচ্ছে,

খবর পেয়ে দল বেঁধে আবার এলাম। মেলায় ঘুরে ঘুরে অনেক কিছু খেয়েছি। গ্রামীণ পরিবেশে এমন মেলা সত্যিই দারুণ।’দেবালের টেকের ভূমিমালিকদের একজন চন্দন কুমার পাল বলেন, ‘জমিটির মালিক আমরা কাকাতো-জ্যাঠাতো ভাইয়েরা সবাই। স্থানীয় হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলে আমরা জ্যৈষ্ঠ মাসের ২ তারিখে এই মেলা করি। এই মেলার প্রচলন কবে থেকে শুরু হয়েছে, তা বলতে পারবে না, শুধু বলতে পারবে শত বছরের পুরোনো এই মেলা।’পাঁচদোনা

 

শতবর্ষী শতাধিক বটগাছের ছায়ায় বসে যে মেলা

 

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, শত শত বছর ধরে মেলাটির আয়োজন হয়ে আসছে। বটগাছগুলোর বয়সও শত বছরের বেশি। মেলাটির কোনো আয়োজক নেই, সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে অংশ নেন।

আরও পড়ুন:

6 thoughts on “শতবর্ষী শতাধিক বটগাছের ছায়ায় বসে যে মেলা”

Leave a Comment